ইসলাম

ব্যক্তি হিসেবে নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্যের মাপকাঠি, যাঁর কোনো দোষত্রুটি নেই

ব্যক্তি হিসেবে নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্যের মাপকাঠি, যাঁর কোনো দোষত্রুটি নেই। আর ঠিক-ভুল মিলিয়ে একটা মুসলিম সমাজ কেমন হবে, তার সর্বোত্তম সামষ্টিক উদাহরণ সাহাবিদের প্রজন্ম, তারপর তাদের পরের প্রজন্ম, তারপর তাদের পরের প্রজন্ম।

মানুষ যখন দেখে এই সাহাবি-তাবিঈদের প্রজন্ম থেকেই মুসলিমরা নিজেদের মধ্যে তুমুল রক্তারক্তি শুরু করে দিয়েছে, তখন উহুহু করে কান্না করে ফেলে। ইসলামে এত মারামারি কেন? তাহলে কি ইসলামটাই কোনো মজিদ পীরের ধোঁকাবাজি? না হলে শ্রেষ্ঠ প্রজন্মই নিজেরা নিজেরা খুনাখুনি করল কেন? ভবিষ্যদ্বাণী তো মিলল না।

অথচ সাহাবি-তাবিঈদের রক্তারক্তিই আমাদের জন্য সবচেয়ে স্বস্তির বিষয় হওয়ার কথা ছিল। আল্লাহ আমাদের আশ্বস্ত করে দিলেন যে, মানবসমাজে মতভেদ, অবিশ্বাস, দ্বন্দ্ব আর হানাহানি থাকবেই। মারপিট দেখেই হায় হায় আহা উহু করে উঠার কোনো দরকার নেই। এটাই বরং সৃষ্টিজগতের বাস্তবতা, অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্য।

কোনো দুই বন্ধুর বন্ধুত্ব কখনো এমন হয় না, যেখানে একজনের আইসক্রিম খাওয়ার ভঙ্গি দেখে অপরজন একটু হলেও নাক সিঁটকায়নাই৷ একটা মানবসমাজ যখন যথেষ্ট বড় হয়ে যায়, তাতে ভাঙনের এলিমেন্ট অন্তর্নিহিতই থাকে।

আপনি বিছানায় শুয়ে শুয়ে নির্বিঘ্নে বলতে পারেন “অ্যাই কেউ মারামারি কইরো না। সবাই মিলেমিশে থাকো।” কিন্তু বাস্তব ময়দানে নেতৃত্ব দিতে গেলে দেখবেন এইসব “এইটাও ঠিক, ওইটাও ঠিক” জাতীয় প্রবাদ-প্রবচন মেনে চলা সম্ভব না। শৃঙ্খলা ভেঙে যেতে পারে, এই অনাস্থা থেকেই একে অপরের উপর ক্র্যাকডাউন করে৷ সেটাও শত্রুদের উপর না। নিজ মতাদর্শের ভিন্ন ধারার উপর। কারণ শত্রুরা তো ভুলই, এটা সবাই জানে৷ কিন্তু আপনার সঠিক মতাদর্শটাকে কেউ ভিন্ন (আপনার মতে, ভুল) ধারায় প্রচার-প্রয়োগ করলে আপনার শঙ্কা হবে, এতে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি। একরকম বাধ্য হয়েই আপনি তাতে হস্তক্ষেপ করবেন। আর আমজনতা ভাববে আপনি ক্ষমতার লোভে হিংসা করছেন।

যেকোনো ময়দানের সবচেয়ে বড় ছাতাটা বাকি ছাতাগুলোকে মেলতে দেয় না। এটা এই আস্থার সংকটের কারণেই৷ হানাফি-অধ্যুষিত ভূখণ্ডের আলেমরা চাইবে না সেখানে একটা সালাফি ধারা জন্ম নিক। জামায়াতে ইসলামী চাইবে না রাজনৈতিক-সামষ্টিক সক্রিয়তার মাঠে অন্য কোনো ইসলামপন্থী ধারা শক্তিশালী হয়ে উঠুক। তাবলিগ চাইবে না দাওয়াতি ময়দানে অন্য কোনো মেহনত ডানা বিস্তার করুক। সৌদি অথোরিটি চাইবে না লাজনা দাইমার বাইরে অন্য কেউ ফাতওয়া ইশু করুক। হামাস চাইবে না গাযা স্ট্রিপে অন্য কোনো সশস্ত্র আন্দোলন গড়ে উঠুক। সাধারণত এটা কারো ক্ষমতালোভের কারণে না৷ নিজেদের সঠিক কর্মপন্থার বিপরীতে অন্যগুলোর কী দরকার, বা সেগুলো আমাদের পরিশ্রম পণ্ড/খণ্ড করে দেয় কি না, এই মানবীয় আশঙ্কার বশে।

নিজেদের মধ্যে কামড়াকামড়ি করাটা ওই মতাদর্শের শক্তির নিদর্শন। ক্ষমতায় থাকাকালে আমরা প্রায় প্রতিদিন নিউজ দেখতাম, ছাত্রলীগের দুই-তিন দলের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। এখন আর সেসব দেখেন? দেশের কোথাও আর লীগের ভেতর দলীয় কোন্দল আছে? এখন সার্ভাইভালের জন্য তারা সবাই পিঠে পিঠ লাগিয়ে সবদিকে চোখ রেখে তক্কে তক্কে আছে।

সময় যত গড়াবে, বিএনপি-জামাতের মধ্যে তত কামড়াকামড়ি দেখবেন। ছাত্র/সমন্বয়করা নানারকম স্বার্থের দ্বন্দ্বে জড়িয়ে নানারকম দল গঠন করবে। জামাতি-তাবলিগি-জিহাদি খামচাখামচি হবে। ইসলামিস্ট-সেকুলাঙ্গার নির্বিশেষে অ্যান্টি-লীগারদের জন্য এটা একটা সুলক্ষণ। এর মানে তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি এখন ডালপালা মেলছে।

দ্বীন কায়েমের পদ্ধতি নিয়ে বাস্তবে-ফেসবুকে মারামারি হতে দিন। এর মানে হলো মুসলিমদের জীবন থেকে রিয়াল-বার্সা বা ডিসি-মার্ভেল বিতর্কগুলো সাময়িকভাবে ইরেলেভ্যান্ট হয়ে গেছে। আমরা তো চাই মুসলিমদের ওই জামানা ফিরে আসুক, যেখানে হানাফি আর শাফেয়িরা একে অপরকে পিটায়া নিজের রাজ্য থেকে বের করে দিত। এরকমটা হওয়া মানেই মুসলিমদের জীবন পুরোদমে ইসলামকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে।

এখনো আমাদের দেশে ইসলাম ভালো, না সেকুলাঙ্গারিজম ভালো এই বিতর্ক হয়। তার মানে সেকুলাঙ্গারিজম এখনো এখানে প্রাসঙ্গিক। আল্লাহ এই জমিনে মুসলিমদের এতই শক্তিশালী করুন, এতই শক্তিশালী করুন, যেন বিতর্ক থেকে বাম-শাহবাগ-সেকুলাঙ্গারিজম প্রসঙ্গটাই পুরোদমে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।

কেউ আমিন না বলে যাবেন না।

#HujurHoye

ফেসবুক পোষ্ট

Hi, I’m মেহেদী জামান

Leave a Reply