আমরা দিল্লীর গোলামীর জিঞ্জির ছিন্ন করেছি ওয়াশিংটনের দাসত্ব করার জন্যে নয়।
লেখক – আসিফ আদনান
ঘটনার সিকোয়েন্সটা একটু খেয়াল করুন।
কলকাতায় প্রশিক্ষণরত ডাক্তার মৌমিতা দেবনাথকে ভয়ঙ্করভাবে ধর্ষন এবং হত্যা করা হলো কলকাতায়।
এ ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ১৬ই অগাস্ট কর্মসূচী পালন করে নারীবাদী সংগঠনগুলো। সেখানে গিয়ে হাজির হন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রনালয় বিষয়ক উপদেষ্টা। বলেন:
“‘আমাকে কিছু প্রস্তাব দিতে পারবে? তাহলে আমরা ঝাঁপিয়ে পড়বো। বলো, রাষ্ট্রীয় কাঠামো কীভাবে কাজে লাগাবো।” [১]
উপদেষ্টার আকুল আবেদনে উৎসাহিত হয়ে কি না কে জানে, নারীবাদীরা সমাবেশে ১৩ দফা দাবি উত্থাপন করে। যার মধ্যে আছেঃ
মুসলিম পারিবারিক আইন, যেমন উত্তরাধিকারের বিধান বাতিল করা (ইউনিফর্ম ফ্যামিলি কোড চালু এবং বাস্তবায়ন করতে হবে।)
ট্র্যান্সফর্মাসদের জন্য কোটা। তাদের জন্য আলাদা কর্মসংস্থান, তাদের জন্য আলাদা পরিচয়পত্র। অর্থাৎ কার্যত স্বীকৃতি।
লেইট টার্ম অ্যাবরশনসহ সব ক্ষেত্রে সব ধরণের গর্ভপাতের পূর্ন ‘স্বাধীনতা’। [২]
এই ঘটনার কিছু দিন পর ২৪ শে অগাস্ট, ব্যারিস্টার সারা হোসেইন একটা সিভিল সোসাইটি প্ল্যাটফর্মের আলোচনায় বললেন, আমরা কি অ্যামেরিকান স্টাইল বাকস্বাধীনতা না? প্রবাবলি নট। নারীবিদ্বেষী এবং বিভিন্ন সম্প্রদায় বিরোধী বক্তব্যের ওপর রেস্ট্রিকশানস থাকা দরকার। [৩]
এখানে ‘সম্প্রদায়’ শব্দের মধ্যে সুনিশ্চিতভাবেই এলজিটিভি-কেও ইঙ্গিত করা হয়েছে।
তারপর সম্ভবত ২৫শে অগাস্ট চ্যানেল ২৪ এর অনুষ্ঠানে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বললেন, বাংলাদেশে “আহমাদিয়া”, “আদিবাসী”সহ বিভিন্ন কমিউনিটি বর্তমানে অসহায় বোধ করছে, আর “সবচেয়ে বড় কথা” এলজিটিভি কমিউনিটি অসহায় বোধ করছে, ৩/৪ দিন ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের সাথে উনারা নাকি সংলাপ করেছেন। এবং সরকার এদের জন্য কিছু করবে এই প্রত্যাশাও আছে। [৪]
অর্থাৎ, একদিকে ইসলামবিরোধী র্যাডিকাল নারীবাদী বিভিন্ন দাবিকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা চলছে, এলজিটিভি বিকৃতিতে স্বীকৃতি দেয়ার দাবি উঠছে, চলছে কোঅর্ডিনেটেডভাবে সরকারের ওপর প্রেশার ক্রিয়েট করার চেষ্টা। অন্যদিকে এসব এজেন্ডার বিরোধিতাকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারেও চলছে আলোচনা।
অ্যামেরিকান সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদের অংশ হিসেবে অনেক দিন ধরেই বাংলাদেশের পাঠ্যক্রম এবং আইনের মধ্যে অবাধ ও বিকৃত যৌনতার শিক্ষা ইনকর্পোরেট করার চেষ্টা হয়েছে। মার্কিন ও আন্তর্জাতিক ডোনার, দেশীয় এনজিও, নারীবাদী, এবং মার্কিনপন্থী সুশীলদের একটা নেক্সাস কয়েক দশক ধরে এজন্য কাজ করে যাচ্ছে।
দীপু মনির ঘনিষ্ট এনসিটিবির মশিউর মূলত এনজিওগুলোর প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী-ই স্কুলের পাঠ্যবই তৈরি করেছিল। এ নিয়ে বিস্তার লেখালেখি হয়েছে, বিস্তারিত তথ্যপ্রমান আমরা তুলে ধরেছি।
এখন আবার সেই নেক্সাস সক্রিয় হয়েছে। এবং মার্কিনী যৌন উপনিবেশবাদ চাপিয়ে দেয়ার পায়তারা করছে বাংলাদেশের ওপর। এই এক কাজ হাসিনা আমলেও হয়েছে।
কিছু বিষয় স্পষ্টভাবে বোঝা দরকার।
বাংলাদেশের ছাত্রজনতা তাদের রক্ত আর লাশ দিয়ে হাসিনার পতন ঘটিয়েছে। সমাপ্তি টেনেছে মাফিয়াতন্ত্রের। বাংলাদেশে অ্যামেরিকান ঔক মতাদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষ এই কুরবানী করেনি। এই ধরণের যেকোন অপচেষ্টা বাংলাদেশের সমাজ মেনে নেবে না। যারা এই দাজ্জালী প্রকল্পের সহযোগী হবে ইতিহাস এবং বাংলার মানুষ তাদের ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করবে।
আমরা দিল্লীর গোলামীর জিঞ্জির ছিন্ন করেছি
ওয়াশিংটনের দাসত্ব করার জন্যে নয়।