টেকনিক্যাল

পাহাড় নিয়ে কিছু কথা

আমরা সবাই জানি, পাহাড়ের এই সমস্যা এক দুই দিনের না। একইসাথে পাহাড়ে আর্মড মুভমেন্টও কম সময়ের না। বাংলাদেশ আর্মিও পাহাড়ে ডিপ্লয়েড আছে বছরের পর বছর। চলেছে বহু কাউন্টার ইনসার্জেন্ট অপারেশন; হয়েছে ৯৭’এর শান্তি চুক্তি সহ আরো অনেক কিছুই। কিন্তু কোনোকিছুতেই স্থায়ী সমাধান হয়নি। দেশে আর্মডস ফোর্সেসের ফ্যানবেজ চায় পাহাড়ে সেনা থাকুক আবার গোসল না করা বামপন্থী প্রগতিশীল চায় সেনা অপসারণ হোক।

এই সবকিছুর মাঝে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপিত হয় “রাষ্ট্রের যদি সত্যিই স্বদিচ্ছা থাকত তাহলে বছরের পর

বছর এই ঝামেলা কিভাবে টিকে আছে”? কারন সেনাবাহিনী চাইলেই দুই মাসের ফুল স্কেল অপারেশনে পাহাড় একদম শান্ত ও স ন্ত্রা স মুক্ত করতে পারে। কিন্তু তারা সেটা করছেনা বা করার চিন্তাটাই মাথায় আনতে পারছে না। অর্থাৎ তারা ঝামেলা জিইয়ে রাখতে চায়। এটাই হলো মূল সমস্যা।

ঝামেলা জিইয়ে রাখা, দুই পক্ষের কোনটাতে অবস্থান না করে দুই পক্ষ থেকেই সুবিধা নেওয়া বা নিরপেক্ষ থাকা, ব্যালেন্স করে চলা― এসবই হচ্ছে ব্রিটিশ চিন্তা।

স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে তৈরি হয় বিভিন্ন ইন্সটিটিউট যেখানে ১৯৪৭ এবং এর আগে থেকে শেখা রাজনৈতিক চিন্তাগুলিকে লালন পালন করা হয়। সেনা, বিমান এবং নৌবাহিনীর একাডেমিগুলি, সরকারি কর্মকর্তাদের ট্রেনিং একাডেমি, কূটনীতিকদের একাডেমি, পুলিশের ট্রেনিং একাডেমি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ইন্সটিটিউট― সবখানেই ব্রিটিশ চিন্তাকে শক্ত ভিতের উপরে প্রতিষ্ঠিত করা হয়। একারণেই বাংলাদেশে যত সরকারই আসুক না কেন, সেটা সেনা-সমর্থিত বা বেসামরিকই হোক, রাষ্ট্রের মূল চিন্তাতে খুব বেশি একটা পরিবর্তন দেখা যায়নি। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশ সর্বদাই সকলের সাথে ভাল সম্পর্ক রাখার নীতিতে এগিয়েছে।

স্নায়ু যুদ্ধের সময়েও বাংলাদেশ সোভিয়েত কিংবা মার্কিন দুই পক্ষের কোনটাতে নাম না লিখিয়ে নাম লিখিয়েছিল ব্রিটিশদের ছত্রছায়ায় গঠিত জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন বা ‘নন-এলাইন্ড মুভমেন্ট’এ। এই জোটে থেকে তারা কমিউনিস্টও হয়নি; আবার যুক্তরাষ্ট্রের কোলেও বসেনি। কিন্তু উভয় পক্ষ থেকেই তারা বেনেফিট নেয়ার চেষ্টা করেছে। এই চিন্তাটাই ব্রিটিশ।

বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের ব্রেইন ব্রিটিশ চিন্তা দ্বারা প্রোগ্রামড হয়ে আছে। এটা অনেকটা Ericksonian Mind Control এর মত। ছোটবেলায় আমাদের মিথ্যাবাদী রাখাল বালক এবং বাঘের গল্প শোনানো হত। এই গল্পের শিক্ষণীয় বিষয় ছিল “মিথ্যা না বলা”। আমরা যখনই মিথ্যা কিছু বলতে যেতাম তখনই আমাদের মাথায় চট করে ওই রাখাল বালকের ভয়াবহ অবস্থার কথা মনে হত। একটা প্যারালাল খুঁজে পেতাম। বুঝতে পারতাম, আমার মিথ্যা বলা একটা ডিজাস্টার বয়ে আনবে। সেইম ব্যাপারটা বহু বছর যাবৎ ঘটে আসছে বাংলাদেশের নীতি নির্ধারকদের সাথে। তারা অফেন্সের কথা ভাবতেই পারেনা, কারন এটা ভাবলেই তাদের চোখের সামনে ভূমি হারানোর মত ডিজাস্টার এসে হাজির হয়।

বিগত সাত দশকে বিশ্বব্যাপী ব্রিটেনের প্রভাব কিন্তু অনেকাংশেই কমে গেছে। কিন্তু কেউই ব্রিটিশদের আঁকা সীমানাগুলিকে চ্যালেঞ্জ করে সুবিধা করতে পারেনি। উদাহরণস্বরূপ, ব্রিটিশরা মধ্যপ্রাচ্যের সীমানাগুলি এমনভাবে এঁকেছে, যাতে করে কোনভাবেই এই সীমানাকে পরিবর্তন করে নতুন করে আঁকা না যায়। যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে একটা জাতিগত কুর্দী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করলেও তা ভেস্তে গেছে তুরস্ক, সিরিয়া, ইরাক এবং ইরানের বাধায়। অর্থাৎ ব্রিটেন নিশ্চিত করেছিল যে কেউ যদি এই সীমানাগুলিকে পরিবর্তন করার চেষ্টা করে তাহলে এই রাষ্ট্রগুলি নিজেরাই সেই কাজে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্য থেকে সেই শিক্ষাটাই নিয়েছে যেকারণে কুর্দীরা বুঝে গেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ বাস্তবায়নে তারা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করলেও তাদের ভাগ্যে নিজস্ব জাতি রাষ্ট্র নেই। এমনকি সুপারপাওয়ার যুক্তরাষ্ট্রও সেখানে অপারগ। এটাই হচ্ছে ব্রিটেনের প্রভাব।

সাত দশক পরেও ব্রিটেন যেকোন আলোচনার টেবিলে হাজির থাকে এই সুবাদেই। তারা যেসব দেশের মানচিত্র এঁকেছে, তারাই অনেক ক্ষেত্রে সেই দেশের সংবিধান লিখে দিয়েছে এবং অভ্যন্তরের বিভিন্ন ইন্সটিটিউট তৈরি করেছে। তাই তাদের হাতে তৈরি হওয়া সেই রাষ্ট্রের গতিপ্রকৃতির ধরণ তাদের চাইতে বেশি আর কেউ বুঝতে পারে না।

খুব ভালোমত খেয়াল করলে বুঝতে পারবেন, বিভাজনের খেলা তার মাত্রা ছাড়িয়েছে। প্রথমে হিন্দু মুসলিম, তারপর সুন্নি ওহাবী এবং সবশেষে পাহাড়ি বাংগালী। অর্থ্যাৎ, Divide And Rule

লেখকের ফেসবুক পোস্ট

Hi, I’m শাফিন রহমান

Leave a Reply