ইতিহাসযুদ্ধ

তারিখটা ছিল ১১ই আগস্ট, ২০১৭ সাল। স্থান শাবওয়াহ গভর্নরেট, সাঊদার্ন ইয়েমেন।

তারিখটা ছিল ১১ই আগস্ট, ২০১৭ সাল। স্থান শাবওয়াহ গভর্নরেট, সাঊদার্ন ইয়েমেন।

ইয়েমেনের এই অঞ্চলটা অদ্ভুত। এর কোথাও সীমাহীন বালির সমুদ্র, কোথাও আবার ছোট্ট টিলার সমাবেশ জটলা করে আছে, কোথাও আবার নিভৃতে পড়ে আছে শুকিয়ে যাওয়া কোনো প্রাচীণ নদীর তলদেশ। সবমিলিয়ে আরব পেনিনসুলার শেষ সীমানায় আরব সাগরের তীরবর্তী অঞ্চলটি যেন আরব মরু অঞ্চলের আদর্শ প্রতিচ্ছবি।

কিন্তু, মরু আরবের একটি বস্তু তার মাঝ থেকে হারিয়ে গিয়েছে। তা হলো, নীরবতা! মরুভূমির নিঃসীম নীরবতার গুণটি তার মাঝ থেকে হারিয়ে গিয়েছে। আসলে বলা উচিত, কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আজ নয় দিন হতে চললো, ইয়েমেনের দক্ষিণের মরুতে নীরবতার দেখা নেই। ভাবতে না ভাবতেই আচমকা রোটরের প্রবল গর্জনে খান খান হয়ে গেলো চতুর্দিকের সাময়িক নিঃস্তব্ধ পরিবেশ! অল্পক্ষণের মাঝে নীল আকাশের ছত্রছায়ায় দৃষ্টিগোচর হলো দূর দিগন্ত দিয়ে নিশ্চিন্ত ভঙ্গিমায় ধেয়ে চলা একটি UH-60। মানুষের কাছে যার সাধারণ পরিচয় হলো, ব্লাক হক।

ব্লাক হকের বাইরে দারুণ দক্ষ হাতে লাগানো পেইন্টিং কাছ থেকে দেখলে বোঝা যায়, চপারটির আবির্ভাব হয়েছে UAE Armed Forces এর বহর থেকে। আর ব্লাক হকটির কেবিনে অবস্থান নেওয়া আজকের যাত্রীদের পরিচয় হলো, তারা সকলে UAE Presidential Guard এর কমাণ্ডো। যান্ত্রিক ফড়িংয়ে চড়ে যারা আজ চলেছে সাঊদার্ন ইয়েমেনে ঘাঁটি গেড়ে বসা দূর্ধর্ষ আল-কায়েদা অপারেটিভদের সন্ধানে। আরব আমিরাতের সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে ভোজবাজির ন্যায় মরুভূমির তপ্ত হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে যারা!

০৩/০৮/২০১৭ সাল তারিখে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সশস্ত্র বাহিনী ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলে United Nations Designated Terrorist Organization Al-Qaeda in the Arabian Peninsula (AQAP) এর ওপরে শক্তিশালী সামরিক অভিযান শুরু করে। তখন তারা শাবওয়াহ গভর্নরেটের ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ বসিয়ে রেখেছিল। কিন্তু, অভিযান শুরুর পর আজ এগারো তারিখ, একজন আল-কায়েদার দেখা মিলছে না কোথাও! সুতরাং, আমেরিকার Joint Special Operations Task Force – Yemen (JSOTF-Y) ও তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা আমিরাতি সেনারা তন্নতন্ন করে দক্ষিণ ইয়েমেন খুঁজে ফিরছে উধাও হয়ে যাওয়া যোদ্ধাদের সন্ধানে। কিন্তু, আপাতত কারো ভাগ্য খোলেনি। এইমূহুর্তে আমক্বিলের ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়া হেলিকপ্টার ফ্লাইটটি ভাগ্য বদলের অগণিত যে চেষ্টার সবচেয়ে সাম্প্রতিক অংশ। আর, অতিশীঘ্র তা ফলপ্রসূও হতে চলেছে। যদিও, আমিরাতি কমাণ্ডোরা জানে না যে, তা হবে আসলে তাদের জন্য চরম অশুভ!

“The Beginning”

শান্ত মরুভূমি আচমকা জীবন্ত হয়ে উঠলো। কপ্টারের ব্লেডের বাতাস কেটে চলার জোরালো শব্দকে ছাপিয়ে মরুভূমির দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে যেতে শুরু করলো বিস্ফোরণের ন্যায় বিকট ভয়াল একটি আওয়াজ! ব্লাক হকের ককপিট ডিসপ্লেও আচমকা অস্বাভাবিক ভঙ্গিতে জ্বলজ্বল করে উঠলো। চালু হয়ে গেলো চপারে বসানো অত্যাধুনিক মিসাইল অ্যাপ্রোচ ওয়ার্নিং সিস্টেম (MAWS)। বিস্ফোরিত চোখে পাইলট দ্বয় চেয়ে রইলেন সেদিকে। ততক্ষণে ককপিটে বাজতে শুরু করেছে ইমার্জেন্সি অ্যালার্ম। কারণ, মরুভূমির মেঝে থেকে লঞ্চ করা হয়েছে সারফেস টু এয়ার মিসাইল! আর ঠিক এইমূহুর্তে তাদের হেলিকপ্টারের দিকে ধেয়ে আসছে সাক্ষাৎ মৃত্যুদূত!

(০১)

কিছুক্ষণের মাঝে হুলস্থুল শুরু হয়ে গেলো দুবাই ও আবু ধাবির অভিজাত মহলে। গার্ড হেডকোয়ার্টার্স, আবু ধাবির অপারেশন্স সেন্টার থেকে সংবাদ রওয়ানা হলো স্বয়ং মুহাম্মাদ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ানের দিকে! ফরেন মিনিস্টার আব্দুল্লাহ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ানের সন্ধানেও সামরিক কর্মকর্তারা বেরিয়ে পড়লেন। সংবাদ রওয়ানা হলো মুহাম্মাদ বিন জায়েদের কন্যা শাম্মা বিনতে মুহাম্মাদ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ানের তরফেও। তাকে জানানো হলো, দক্ষিণ ইয়েমেনের মাটিতে আপনার জীবনসঙ্গী জায়েদ বিন হামদান বিন জায়েদ আল-নাহিয়ান ও তার কমাণ্ডো টিমকে বহনরত চপার সারফেস টু এয়ার মিসাইলের আঘাতে ভূপাতিত হয়ে গিয়েছে!

ওদিকে আবু ধাবি সিটিতে যখন এসব চলছে, তখন সেখান হতে ১৩৯ কিলোমিটার দূরের দুবাই সিটিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডিফেন্স অ্যাঁটাশে কর্নেল মিগুয়েল কোরিঁয়া তখন তার নিজ বাসায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। আচমকা তার ফোনটি বাজতে শুরু করলো। খানিকটা বিরক্তির সাথে তিনি কলটি রিসিভ করলেও, ওপারের কথা শোনার সাথে সাথে তার চেহারা হতে অদৃশ্য হয়ে গেলো সমস্ত বিরক্তি। বিপরীতে সেখানে স্থান করে নিলো নগ্ন লোভ ও দারুণ সম্ভাবনার নির্লজ্জ প্রত্যাশা! কিছুক্ষণের মাঝে প্রস্তুত হয়ে ঝড়ের গতিতে বেরিয়ে পড়লেন তিনি। ততক্ষণে তার ফোন হতে একের পর এক আঊটগোয়িং কল শুরু হয়েছে। জেগে উঠতে শুরু করেছে দুবাইয়ের ০৯ ঘন্টা পেছনে থাকা রাতের ওয়াশিংটন!

(০২)

U.S. Department of War, পেন্টাগন থেকেও একটি কল শুরু হলো। নেভাল নেটওয়ার্ক ওয়ারফেয়ার কমাণ্ড হয়ে কলটি রওয়ানা হলো ন্যাভসেন্ট, ফ্লিট হেডকোয়ার্টার্স, ইঊনাইটেড স্টেটস ফিফথ ফ্লিটে। যার অল্পক্ষণের মাঝে ইয়েমেনের উপকূল স্পর্শ করে আরব সাগরের মাঝ দিয়ে ভেসে চলা অ্যাম্ফিবিয়াস অ্যাসল্ট শিপে মোতায়েন U.S. Marine Corps ফর্মেশনের কমাণ্ডিং অফিসারকে জানানো হলো, CIC ‘তে তলব করা হয়েছে আপনাকে! কলে আছেন স্বয়ং জেনারেল জেমস ম্যাটিস, ইঊনাইটেড স্টেটস সেক্রেটারি অব ডিফেন্স!

কিছুক্ষণের মাঝে সমগ্র জাহাজে সাজ সাজ রব পড়ে গেলো। Marine Raider Regiment ও 2nd Reconnaissance Battalion এর অপারেটর দ্বারা সংগঠিত দু’টি স্পেশাল অপারেশন্স টিম আর নেভির সুদক্ষ মেডিক বা কর্পসমেনদের আরেকটি দলকে নিয়ে জাহাজের ডেক হতে লিফট-অফ করলো Marine Maritime Tiltrotor Squadron এর দু’টি অসঁপ্রে হেলিকপ্টার। গন্তব্য তাদের আমক্বিল, শাবওয়াহ গভর্নরেট, সাঊদার্ন ইয়েমেন।

মেরিন রেইডার ও রিকন ফর্মেশন যতক্ষণে ব্লাক হকের ক্র্যাশ সাইটে অবতরণ করলো, ততক্ষণে আল-কায়েদার অ্যাসল্টাররা ভূপাতিত কপ্টারে থাকা UAE Presidential Guard এর কমাণ্ডোদের ছিন্ন-ভিন্ন করে ফেলার উপক্রম করেছে! তবে, মেরিন স্পেশাল অপারেশন্স ইঊনিটের আগমনের কারণে পিছু হটে গিয়ে পুনরায় মরুভূমির বালিয়াড়ির মাঝে হারিয়ে গেলো তারা। ওদিকে সাইট সিকিওর করে কর্পসমেন যতক্ষণে রেসকিঊ শুরু করেছে, ততক্ষণে আমিরাতি কমাণ্ডোদের অবস্থা জীবন্মৃত! স্পেশাল অপারেশন্স মেডিকেল পার্সোনেল তাদের তবুও যথাসম্ভব স্থিতিশীল করে অসঁপ্রেতে তুলে দিলেন। কিন্তু, এরই মাঝে জায়েদ বিন হামদান প্রবল রক্তক্ষরণ থেকে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে চলে যেতে আরম্ভ করলো!

অসঁপ্রে ততক্ষণে পুনরায় আকাশে ভেসে উঠেছে। ওদিকে জায়েদ বিন হামদান আল-নাহিয়ানের হার্ট বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এমতাবস্থায় একজন স্পেশাল অপারেশন্স কর্পসম্যান সার্জিক্যাল ব্লেড নিয়ে তার পেটের ওপরাংশে ইনসিশন তৈরি করতে শুরু করলেন। অল্পক্ষণের মাঝে তার স্টমাক চিরে সেখান দিয়ে সোজা জায়েদের হৃদপিণ্ডের দিকে হাত ঢুকিয়ে দিলেন তিনি। ডাক্তারি পরিভাষায় যাকে Resuscitative Thoracotomy বলা হয়। এরপর সেখান হতে তিনি সরাসরি তার হার্ট পাম্প করতে শুরু করলেন। এভাবে Open Cardiac Massage (OCM) পরিচালনার পর পুনরায় জায়েদ বিন হামদানের হার্ট সচল করা সম্ভব হলো। ফলে, হেলিকপ্টার যখন অবশেষে U.S. Navy এর জাহাজে নামতে শুরু করলো, তখনো সে বেঁচে আছে!

জাহাজে অবতরণের পর অমন অবস্থায় যখন তাকে অপারেশন থিয়েটারে ঢোকানো হলো, তখন সার্জনরা তার অবস্থা দেখে হত-বিহ্বল হয়ে পড়েন। এমতাবস্থায় কর্পসমেনরা পুনরায় সার্জনদের গাইডেন্স দিতে শুরু করে। ওদিকে জায়েদ ও অন্যান্য বেঁচে থাকা মারাত্মক আহত কমাণ্ডোদের সার্জারি করাতে গিয়ে শিপে রক্তের স্বল্পতা দেখা দিতে শুরু করে। এমতাবস্থায় মেরিন ও নেভি পার্সোনেলরা সারিবদ্ধভাবে রক্ত দিতে সমবেত হয়। সেদিন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিন নেভির ইতিহাসে বৃহত্তম ওয়াকিং ব্লাড ব্যাংক ডেপ্লয় করা হয়েছিল। ৬৬ ইঊনিট ব্লাডের ৫৬ ইঊনিট সেদিন সেখানে তাদের ওপর সার্জনরা ব্যবহার করতে বাধ্য হন। এভাবে সুদীর্ঘ ৪৮ ঘন্টা পর বেঁচে থাকা সমস্ত আমিরাতিকে স্থিতিশীল অবস্থায় নিয়ে আসেন তারা।

(০৩)

ঘটনা ৪৮ ঘন্টা স্পর্শ করার মূহুর্ত। তখন কাতারের ফরওয়ার্ড হেডকোয়ার্টার্স, U.S. Central Command এর মাটিতে কেবলমাত্র অবতরণ করেছে একটি C-17 গ্লোবমাস্টার মিলিটারি কার্গো বিমান। প্লেনটি সদ্য জার্মানির র‍্যামস্টাঈন থেকে ফেরত এসেছে। আর প্লেনের সাথে সাথে ফিরেছে একটি United States Air Force Critical Care Air Transport Team (CCATT)। যারা মধ্যপ্রাচ্যের রণাঙ্গনে মারাত্মক আহত অজ্ঞাতনামা কোনো মার্কিন মিলিটারি পার্সোনেলকে র‍্যামস্টাঈনের Landstuhl Regional Medical Center (LRMC) এ পৌঁছে দিয়ে এসেছে।

Landstuhl Regional Medical Center (LRMC) কে ইঊরোপের মাটিতে শ্রেষ্ঠতম মিলিটারি ট্রমা সেন্টার হিসাবে গণ্য করা হয়। ৬৫ শয্যার হাসপাতালটিতে নিয়মিত AFRICOM, CENTCOM ও NATO এর Eastern Frontier হতে মারাত্মক আহত হয়ে আসা সেনাদের চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে।

যাইহোক, কাতারে তখন সবেমাত্র অবতরণ করা মার্কিন এয়ারফোর্সের লেফটেন্যান্ট কর্নেল লঁরা উঊগিনস ও তার CCATT টিম তখন ক্লান্তির শেষ সীমানায় পৌঁছেছে। এমন অবস্থায় তার ইঊনিট কমাণ্ডার তাকে ও তার টিমকে নিয়ে পুনরায় ব্রিফ করলেন। যেখানে তাকে নিম্নোক্ত বিষয়াবলি জানানো হলো।

০১|

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব ডিফেন্স জেনারেল জেমস ম্যাটিস স্বয়ং তোমার মিশন অথোরাইজ করেছেন।

০২|

তোমার টিম যদি এখন মিশনের দায়িত্ব নিতে চায়, তাহলে তোমাদেরকে অপেক্ষমান C-17 একটি যুদ্ধকবলিত অঞ্চলের এয়ারফিল্ডে নিয়ে যাবে। যেখান হতে হেলিকপ্টার ক্র্যাশে আহত ভিনদেশী একটি সামরিক বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে র‍্যামস্টাঈনের উদ্দেশ্যে উড্ডয়ন করবে তোমরা!

ইঊনিটের কমাণ্ডার Lt Col লঁরা ঊঈগিনসকে আরো জিজ্ঞেস করলেন যে, তোমার টিম গত ২৪ ঘন্টা নির্ঘুম কাটিয়েছে। এমন পরিস্থিতির মাঝে কি তারা পারফর্ম করতে পারবে? প্রত্যুত্তরে নিজ টিমের সাথে আলাপ করে তিনি তাৎক্ষণিক জবাব দিলেন যে, চিন্তার কারণ নাই! আমরা দায়িত্ব নেওয়ার জন্য তৈরি আছি।

সুতরাং, কিছুসময় পর Lt Col লঁরা ও তার টিম সহ কয়েকটি CCATT টিম নিয়ে আরেকটি C-17 কাতার হতে আকাশে উড্ডয়ন করলো। কমাণ্ডের নির্দেশনা অনুসারে পাইলটরা গন্তব্য নির্ধারণ করলেন। বিমানের নাক ঘুরতে শুরু করলো ইয়েমেনের দিকে!

(০৪)

মূলত সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রপ্রধান মুহাম্মাদ বিন জায়েদ যখন সংবাদ পায় যে, তার ভ্রাতুষ্পুত্র ও কন্যার জামাতা জায়েদ বিন হামদান আল-নাহিয়ানের ব্লাক হক সাঊদার্ন ইয়েমেনে ভেঙে পড়েছে, তখন তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে! ঠিক এমন অবস্থায় তার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে অগ্রসর হয় আমিরাতে মার্কিন ডিফেন্স অ্যাঁটাশে হিসাবে নিয়োজিত কর্নেল মিগুয়েল কোরিঁয়া। যার কো-অর্ডিনেশনের ফলে ওয়াশিংটন পরিস্থিতির মূল্য অনুধাবন করতে সমর্থ হয় ও তাৎক্ষণিক পেন্টাগন Marine Special Operations Command (MARSOC) ও USMC এর স্পেশাল অপারেশন্স ও মেডিকেল টিম ক্র্যাশ সাইটের দিকে ডিসপ্যাচ করে।

কিন্তু, সেখানে সফল রেসকিঊ এবং রিকভারি হলেও এরপর পুনরায় বিন জায়েদ ও তার পরিবারকে আমেরিকানদের তরফ হতে জানানো হলো যে, আমরা তাকে স্থিতিশীল করতে পেরেছি। তবে, তার যে কণ্ডিশন, সেখানে তার সত্যিকার চিকিৎসা আমাদের জাহাজ থেকে করা সম্ভব নয়। ওর জন্য তাকে জার্মানিতে নিতে হবে। তখন আমিরাতি রাজ পরিবারের তরফ হতে মার্কিন সরকারকে র‍্যামস্টাঈনে তাদের সন্তান ও তার সঙ্গী সেনাসদস্যদের চিকিৎসা করাবার আবেদন জানানো হলে কর্নেল কোরিঁয়া অনুরোধটি ওয়াশিংটন হতে মঞ্জুর করিয়ে দেন। সুতরাং, অ্যাম্ফিবিয়াস অ্যাসল্ট শিপ হতে পুনরায় অসঁপ্রের একটি ঝাঁক আহত আমিরাতি সৈনিক ও তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব পাওয়া মেরিনদের নিয়ে লিফট অফ করে। যাদের নতুন গন্তব্য নির্ধারিত হয় একটি পরিত্যক্ত এয়ারফিল্ড। এখন আমরা পুনরায় ফিরে আসছি Lt Col লঁরার CCATT ইঊনিটের কাছে।

ইয়েমেনের মাটিতে যখন C-17 মেরিন কর্পসের অসঁপ্রের সাথে Rendezvous করার জন্য অবতরণ করলো, তখন Lt Col লঁরার ইঊনিট অসঁপ্রের সাথে তাদের বিমানের মাঝে Tail to Tail Transfer পরিচালনার প্রস্তুতি আরম্ভ করে। যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অসঁপ্রের টেইল সেকশন সরাসরি C-17 এর রিয়ার কার্গো র‍্যাম্পের সাথে লাগিয়ে দেওয়া হয়। তারপর সরাসরি অসঁপ্রে হতে সমস্ত রোগীকে দ্রুততার সাথে C-17 এর মাঝে নিয়ে আসা হয়। এখন এখান হতে সামনে অগ্রসর হওয়ার পূর্বে CCATT আসলে কি জিনিস, তা সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ সকল পাঠকের বোঝার সুবিধার্থে যুক্ত করে দিলাম।

Critical Care Air Transport Team (CCATT) হলো মার্কিন বিমান বাহিনীর একটা বিশেষ জাতের মেডিকেল টিম। যাদের দায়িত্ব হলো, বিমান বাহিনীর Medical Evacuation ফ্লাইটে মারাত্মক আহত রোগীদের ট্রান্সপোর্ট করার সময়ে তাদেরকে Intensive Care Unit (ICU) পর্যায়ের চিকিৎসা দেওয়া। একটা CCATT টিমে সাধারণত ০৩ জন পার্সোনেল থাকেন। যাদের দায়িত্ব নিম্নরূপ।

০১| Emergency Medicine Doctor (০১ জন)।

০২| Critical Care Nurse (০১ জন)।

০৩| Respiratory Therapist (০১ জন)।

সহজভাবে তাদের দায়িত্ব বলতে গেলে, ফ্লাইট চলাকালীন সময়ে বিমানের মাঝে একটি ICU স্থাপন করা ও সিস্টেমটিকে সচল রাখা। আর তাদের দায়িত্বে থাকা রোগীকে নির্ধারিত গন্তব্যে তার জন্য অপেক্ষমান চিকিৎসকদের হাত পর্যন্ত নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া। যাইহোক, পুনরায় মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসছি।

MEDEVAC Flight তার রোগীদের নিয়ে সেদিন নিরাপদে ইয়েমেন থেকে টেক-অফ করতে সমর্থ হয়। তারপর রোগী সমেত Lt Col লঁরা যতক্ষণে জার্মানিতে অবতরণ করলেন, এর মাঝে র‍্যামস্টাঈন বিমান ঘাঁটিতে বিলাসবহুল প্রাইভেট জেটের মেলা বসে গিয়েছে। মূলত, সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজ পরিবারের সদস্যরা মার্কিন সরকারের বিশেষ অনুমতি নিয়ে আগেই সেখানে তাদের সন্তানকে রিসিভ করার জন্য রওয়ানা হয়ে গিয়েছিল। তারপর র‍্যামস্টাঈনে রোগীদের রেখে যখন CCATT পুনরায় মধ্যপ্রাচ্যে ফিরে এলো, তখন জেনারেল জেমস ম্যাটিস স্বয়ং তাদের Debrief করলেন। সেসময় তার মন্তব্য যা ছিল, তা নিচে তুলে ধরছি।

“You just performed ‘Medical Diplomacy’ that would pay dividends for years to come”

(মেডিকেল ডিপ্লোম্যাসি)

১৫ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সাল তারিখে সংযুক্ত আরব আমিরাত Abraham Accord চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। সেসময় President Donald J. Trump এর দিকে তাকিয়ে ফরেন মিনিস্টার আব্দুল্লাহ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ান সম্প্রতি পদোন্নতি পাওয়া মেজর জেনারেল মিগুয়েল কোঁরিয়াকে ইঙ্গিত করে বলেন, “এই জেনারেল আমার পরিবারের অংশ!”

সংযুক্ত আরব আমিরাত সেদিন Abraham Accord এ স্বাক্ষর করার পেছনে ‘১৭ সালে জায়েদ বিন হামদানের রেসকিঊতে ভূমিকা রাখা মেজর জেনারেল কোরিঁয়ার ভূমিকা আমিরাতিদের কাছে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ছিল৷ ‘১৭ সালের রেসকিঊয়ের পর যার অবস্থান আবু ধাবির রাজকীয় মহলে নায়কের পর্যায়ে উন্নীত হয়।

সুতরাং, আমি নিয়মিত যা বলার চেষ্টা করি, এখানে তার প্রমাণ হলো আরেকবার। সংগঠন, সংস্থা বা দেশ কিছু নয়। মানুষ হলো আসল। মানুষকে নিয়ন্ত্রণে নিতে সমর্থ হলে আদর্শ বা পতাকা বা সংগঠনের আর কোনো মূল্য সেখানে থাকে না।

আর, জায়েদের কি হলো? একদা বৃটেনের রয়্যাল মিলিটারি একাডেমি, স্যাণ্ডহার্স্টের ছাত্র জায়েদ বিন হামদান আল-নাহিয়ান সেবার ০৬ মাস পর সুস্থ হয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ফেরত আসেন। তারপর ১৭ই মে, ২০২৩ সাল তারিখে শাম্মা বিনতে জায়েদ তাদের প্রথম সন্তান হামদানের মা হয়েছেন।

(সমাপ্ত)

ফেসবুক পোস্ট

Hi, I’m Revan M

self-proclaimed defence analyst. tracking conflict in SA, MENA & Eastern Europe. Muslim. Fairbanks, Alaska

Leave a Reply