২৬শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সাল।
২৬শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সাল।
গেলো রাতে Line of Control (LoC) অতিক্রম করেছে Indian Air Force (IAF) ফাইটার ফর্মেশন। বালাকোটের মাটির ওপরে শক্তিশালী বম্বিং পরিচালনা করে যারা নিরাপদে পুনরায় ইণ্ডিয়ার সীমানায় ফিরে যেতে সমর্থ হয়েছে। অতএব, পাকিস্তানি পক্ষের এমন পরিস্থিতিতে কোন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত! আলোচনা চলছে তা নিয়ে।
Imran Khan নির্দেশ দিলেন, হামলা করতে হবে!
আলোচনার মাঝে উপস্থিত ছিলেন Chairman of the Joint Chiefs of Staff Committee (CJCSC), Chief of Air Staff (CAS) ও Chief of Naval Staff (CNS)। যেখানে CJCSC হলেন পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ পদবির নীতিনির্ধারক। যার দায়িত্ব হলো অনুরূপ গুরুতর অবস্থা দেখা দিলে Prime Minister ‘কে সামরিক বাহিনীর পক্ষ হতে পরামর্শ দিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করা।
পাকিস্তানের CJCSC তখন জেনারেল যুবাঈর মাহমুদ হায়াত। জেনারেল হায়াত তার Prime Minister ‘কে সমর্থন দিলেন। জানালেন, হামলা করতে হবে! পাকিস্তান বিমান বাহিনীর CAS ছিলেন তখন এয়ার চিফ মার্শাল মুজাহিদ আনওয়ার খান। তিনি জানালেন যে, তার Pakistan Air Force হামলা করবে!
মিটিংয়ে তখন আরেকটা লোক বসে ছিল। Chief of Army Staff (COAS) বলে পরিচিতি পাওয়া লোকটির নাম ছিল জেনারেল ক্বামার জাভেদ বাজওয়া। সে Pakistan Army থেকে জানালো যে, হামলা হওয়া চলবে না! সকলে অবাক হয়ে গেলেন!
আসলে ইণ্ডিয়া সেদিন রাতে চরম ব্যর্থ হামলাটি পরিচালনার সাথে সাথে পাকিস্তানের আসন্ন হামলা বন্ধ করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হতে জেনারেল বাজওয়ার সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা হয়। ওদিকে UAE ও সৌদি আরবও ইণ্ডিয়ার ওপর হামলা না করার জন্য জেনারেল ক্বামার জাভেদ বাজওয়ার সাথে যোগাযোগ করে। দুবাই ও রিয়াদ তখন জেনারেল বাজওয়ার সাথে দিল্লির টেলিফোন চালু করে দেয়। সুতরাং, পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের পর সেনাপতি তার নবাবকে জানায় যে, আপনার জবাব দেওয়া চলবে না!
পাকিস্তানি মিলিটারি অফিসিয়ালরা জেনারেল বাজওয়ার কথা শুনে সেদিন হকচকিয়ে গিয়েছিলেন। ওদিকে ইমরান খানকে তার পক্ষে আবার নিয়ন্ত্রণ করাটাও সম্ভব ছিল না। CJCSC এর পদবি জেনারেল বাজওয়ার ওপরে থাকায় তার নির্দেশের বাহিরে যাওয়াটাও বাজওয়ার পক্ষে সম্ভব ছিল না। আবার সামরিক কৌশলগত কারণ দেখিয়ে খানকে থামানোও কঠিন হয়ে পড়েছিল। কারণ, উপস্থিত অধিকাংশ সিনিয়র মিলিটারি লিডার প্রতি-আক্রমণের পক্ষে ও তারা সকলে যার যার অবস্থান থেকে জেনারেল বাজওয়ার উপস্থাপিত সকল কারণকে ছিন্ন-ভিন্ন করে ময়লার ঝুড়িতে নিক্ষেপ করার যোগ্যতা রাখেন।
নিরূপায় হয়ে জেনারেল বাজওয়া তখন সীমিত আকারে জবাব দেওয়ার পরামর্শ দেয়। সুতরাং, পাকিস্তান বিমান বাহিনী Operation Swift Retort লঞ্চ করে। পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান ইণ্ডিয়ার গভীরে গিয়ে ওদের বিভিন্ন সামরিক ফর্মেশনের ওপরে শক্তি প্রদর্শনের উদ্দেশ্য নিয়ে কোনো ক্ষয়ক্ষতি না করে বিমান হামলা চালায়।
যেখানে গিয়ে আবারো জেনারেল বাজওয়ার পরিকল্পনায় বাগড়া দিয়ে বসে পাকিস্তান বিমান বাহিনী। তারা এবার অভিনন্দনকে পাকড়াও করে বসেন। ইমরান খান তখন সিদ্ধান্ত নেন যে, অভিনন্দনকে তো সহজে ফেরত দেওয়া চলবে না! অতঃপর জেনারেল ক্বামার জাভেদ বাজওয়া দৃশ্যপটে Inter Services Intelligence (ISI) ‘কে নিয়ে আসেন।
তখন Director General, Inter Services Intelligence হলেন গিয়ে Lieutenant General আসিম মুনির! যিনি ইমরান খানের ওপর ইণ্ডিয়ার স্কোয়াড্রন লিডার অভিনন্দনের মুক্তির জন্য চাপ তৈরি করেন। তখন ইণ্ডিয়া পুনরায় হামলা করবে না মর্মে সম্মতি দেওয়ার পর অভিনন্দনকে পাকিস্তান হতে মুক্ত করে দেওয়া হয়।
Lt Gen আসিম মুনির তখন সম্পূর্ণ পরিস্থিতি খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। ওনার গুরু জেনারেল বাজওয়ার পথের সমস্ত কাঁটা তাই তিনি বর্তমান সময়ে সরিয়ে ফেলার চেষ্টা চালাচ্ছেন। যার নির্দেশনা মূলত White House হতে পাঠানো হয়েছে। আসলে বাস্তবতা হলো, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া অঞ্চলে মার্কিন স্বার্থ রক্ষার্থে পাকিস্তানে ইমরান খানের মতো কোনো স্বাধীনচেতা নীতিনির্ধারক বা তার পক্ষ নিতে সক্ষম তৎকালীন এয়ার চিফ মার্শাল অথবা CJCSC এর মতো কোনো সিনিয়র মিলিটারি লিডারের অস্তিত্ব থাকা চলবে না।
ধারণা করা যায় যে, গত ০৭ই মে, ২০২৫ সাল তারিখে পাকিস্তানের বর্তমান এয়ার চিফ মার্শাল জহির আহমাদ বাবরের কারণে হয়তো আজকের জেনারেল আসিম মুনির পুনরায় অনুরূপ বিপত্তির মাঝে পড়ে যান। ইণ্ডিয়ার সাথে হয়তো জেনারেল বাজওয়ার মতো করে জেনারেল আসিম মুনিরেরও হামলার আগে কোনো সমঝোতা হয়েছিল। যার ফলশ্রুতিতে ওরা নিশ্চিন্তমনে বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুর ওপর স্ট্যাণ্ড-অফ ওয়েপন লঞ্চ করতে ধেয়ে আসে।
কিন্তু, এয়ার চিফ মার্শাল তখন বিমান বাহিনীর সশস্ত্র জঙ্গিবিমান আকাশে তুলে দিয়ে লড়াই শুরু করার নির্দেশনা জারি করলে জেনারেল আসিম মুনিরের মাথায় হাত দেওয়ার পরিস্থিতি ঘটে যায়। অনুমান করা যায় যে, জেনারেল আসিম মুনির তার সমঝোতার বিষয়টি বিশেষ কোনো কারণে বিমান বাহিনীকে অবগত করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। আর ইণ্ডিয়া ২০১৯ সালের ঘটনা হতে শিক্ষা নিয়ে এবার সীমান্ত অতিক্রম না করে LoC এর ওপারে বসে আক্রমণ করছিল। ফলে, পাকিস্তান বিমান বাহিনী পাল্টা হামলার কোনো সুযোগ পাবে না বা সীমান্তের ওপারে ফায়ার ওপেন করার সাহস করবে না মর্মেও হয়তো আশা ছিল সবার। কিন্তু, এয়ার চিফ মার্শাল জহির আহমাদ বাবর ঠিক সেই অচিন্তনীয় কাণ্ডটি ঘটিয়ে বসলে সমস্ত কিছু ভেস্তে যায়।
বিষয়টির পরিপূর্ণ ইঙ্গিত পরবর্তীতে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় দায়িত্বরত ইণ্ডিয়ার ডিফেন্স অ্যাটাশেঁ ও Indian Navy এর ক্যাপ্টেন শিব কুমারের বক্তব্য হতে পাওয়া গিয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার Air Marshal Suryadarma Aerospace University ‘তে একটি বক্তব্য রাখার সময়ে যিনি ইণ্ডিয়ার যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার কথা স্বীকার করে জানান যে, দিল্লির রাজনৈতিক নীতিনির্ধারণী পর্যায় হতে আমাদের ওপর পাকিস্তানের সামরিক লক্ষ্যবস্তু বা বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ওপর কোনো হামলা পরিচালনা না করার আদেশ ছিল!
ISPR থেকে Pakistan Air Force এর Director General Public Relations (DGPR) ও Deputy Chief of Air Staff (Operations) এয়ার ভাইস মার্শাল আওরঙ্গজেব আহমাদ নিজেও সেসময় অনুরূপ বার্তা দিয়েছিলেন। যখন তিনি বিভিন্ন সময়ে তাঁর এয়ার চিফ মার্শালের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতার ভূয়সী প্রশংসা করেন। মূলত সেদিন পাকিস্তানের এয়ার চিফ মার্শাল ও তার পাকিস্তান এয়ারফোর্স যেভাবে বিদ্যুৎগতিতে আকাশে ভেসে উঠে লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েছিল, তাতে করে পাকিস্তান আর্মি বা সীমান্তের ওপারে থাকা ইণ্ডিয়ানরা কিছু বুঝে ওঠার সুযোগটি পর্যন্ত পায়নি। যেটি পরবর্তী সময়ে বারংবার এয়ার ভাইস মার্শাল আওরঙ্গজেব তাঁর বিবৃতির মাঝে তুলে ধরছিলেন।
সুতরাং, 27th Amendment Bill দ্বারা কেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধানকে CJCSC এর পরিবর্তে Chief of Defence Staff (CDS) করা জরুরি, কেন পাকিস্তানের Strategic Weapons এর নিয়ন্ত্রণ National Command Authority (NCA) থেকে সরিয়ে স্রেফ সেনাপ্রধানের পরামর্শের অধীন করা জরুরি, কেন পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর ০৩টি শাখার ওপরে সেনাপ্রধানকে স্থান দেওয়া জরুরি, তা আশা করি ভেঙে বলার দরকার হবে না।
ধন্যবাদ।