এসো সভ্যতা শিখি, পাঠ-২
ঔপনিবেশিক আমলে ব্রিটিশ ও ইউরোপীয়রা যখন ভারতবর্ষে আসতেন, তখন এখানকার পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে তাদের প্রথমদিকে বেশ অসুবিধা হতো। এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বরের শুরু পর্যন্ত বছরের প্রায় অর্ধেক সময় রাতে তাদের ভালো করে ঘুম আসতো না। ভারতবর্ষের গরম, মশার কামড়, মাছি, এখন-তখন ঝড় এসবের কারণে তাদের ঘুমের দফারফা হয়ে যেত।
ব্রিটিশরা ভারতে আসার আগে থেকেই ভারতবর্ষে হাতপাখার প্রচলন ছিল। কিন্তু ঔপনিবেশিক আমলে এই ব্যজনই হয়ে উঠল একটি নিষ্ঠুর শ্রমসাধ্য কাজ।
গরম থেকে আরাম পাওয়ার জন্য ব্রিটিশরা ভারতীয় ভৃত্য রাখতেন। এদেরকে ‘পাংখাওয়ালা’ বা ‘পাখাওয়ালা’ বলা হতো। এই পাখাওয়ালাদের কাজ ছিল সারা দিনরাত তাদের শ্বেতাঙ্গ মনিবদের বাতাস করে যাওয়া। বড় বড় পাখার সঙ্গে লম্বা দড়ি বাঁধা থাকতো, তারা সেই দড়ি ধরে টেনে টেনে পাখার বাতাস করতেন। কেবল ভোরবেলা আর সন্ধ্যাবেলা বিশ্রাম পেতেন তারা।
একজোড়া পাখাওয়ালা থাকলে একজন একটানা ১২ ঘণ্টা বাতাস করার পর অপরজন শুরু করতেন। আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের শুরুতে যখন মশা-মাছির উপদ্রব বেড়ে যেত, তখন পাখার দরকার পড়ত বেশি। ধনী ইউরোপীয় পরিবারগুলো শোবার ঘরে, বাথটাবের ওপরে, খাবার টেবিলে, ও দীর্ঘক্ষণ বসার জায়গায় পাখা লাগাতেন।
পাখাওয়ালাদের কাছ থেকে কাজ আদায় করে নেওয়ার জন্য সহিংসপন্থা অবলম্বন করতেন ইউরোপীয়রা। অনেক মধ্যবিত্ত শ্বেতাঙ্গ দুই দল পাখাওয়ালা রাখতে পারতেন না। জনসনের মতো ধর্মপ্রচারক পরিবারগুলোও পাখাওয়ালাদের ওপর অত্যাচার চালাতেন। এসব সহিংস কাজের মধ্যে ছিল পাখাওয়ালাদের চুল বেঁধে দেওয়া যাতে তারা ঘুমিয়ে না পড়ে।
চা বাগান ও নীলচাষের মালিকেরা দূরের জায়গাগুলোতে বাস করতেন। অত্যাচারের জন্য এরাই বেশি কুখ্যাত ছিলেন। পাখাওয়ালাদের জন্য তাদের নিজস্ব অত্যাচারের ব্যবস্থা ছিল। যেমন কখনো কখনো পাখাওয়ালাদের বসার স্থানে চিনি ছিটিয়ে দেওয়া হতো। তারা ঘুমিয়ে পড়লে পিঁপড়া এসে তাদের ঘামে ভেজা শরীরে কামড় বসাতো। আরেকটি ব্যবস্থা ছিল পাখাওয়ালার বাহুতে একটি হাঁস রাখা। কাজের সময় যাদের হাত থেকে ওই হাঁস ছুটে যেত, তাদেরকে শাস্তি দেওয়া হতো।
ঈষৎ সংক্ষেপিত – From TBS News
#নষ্টদের_ইতিহাস