সাহেল রিজিয়নের আলোচিত United Nations Designated Terrorist Organization Jama’at Nusrat ul-Islam wal-Muslimin (JNIM) তাদের হাতে আরব আমিরাত সরকারকে ৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধে বাধ্য করেছে!
সাহেল রিজিয়নের আলোচিত United Nations Designated Terrorist Organization Jama’at Nusrat ul-Islam wal-Muslimin (JNIM) তাদের হাতে আরব আমিরাত সরকারকে ৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধে বাধ্য করেছে!
গত ২৫/০৯/২০২৫ সাল তারিখে মালির রাজধানী বামাকোর উপকন্ঠের একটি ফার্মে JNIM অপারেটিভদের দ্বারা পরিচালিত একটা স্ন্যাচ টিম হানা দেয়। যেখান থেকে তারা আরব আমিরাতের একজন, পাকিস্তানের একজন ও ইরানের একজন নাগরিককে উঠিয়ে নিয়ে যায়। পরিস্থিতি সংঘটিত হয়ে গেলে আমাদের পক্ষে অবগত হওয়া সম্ভব হয় যে, বন্দি হওয়া আমিরাতি নাগরিকটি হলেন দুবাইয়ের শেখ জুমা বিন দালমুক আল-মাকতুম। আরব আমিরাতের হয়ে ২০১২ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে অংশ নেওয়া শেখ জুমা আমিরাতের রাজকীয় পরিবারের সন্তান। তার কোম্পানি আফ্রিকার সাহেলের মাটিতে খনিজ সম্পদ উত্তোলন ও পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণের কাজে নিয়োজিত রয়েছে।
আফ্রিকা মহাদেশের মাঝে মালি থেকে মহাদেশটির অন্যতম শীর্ষ পরিমাণ স্বর্ণ রপ্তানি হয়ে থাকে। কিন্তু, রপ্তানির ওসব সোনা থেকে আসা কানাকড়ি পরিমাণ অর্থও শেষপর্যন্ত মালির সাধারণ জনতার চোখে দেখার সুযোগ মিলেনা। আর, সংযুক্ত আরব আমিরাত আলোচ্য স্বর্ণের প্রাথমিক গন্তব্যস্থল মর্মে বিবেচিত হয়। ২০২৩ সালে মালির ভূখণ্ড হতে আরব আমিরাতে ৪.৮৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিমাণ স্বর্ণ পাঠানো হয়েছিল। যা ছিল ‘২৩ সালে মালির উত্তোলিত সর্বমোট স্বর্ণের ০৪ ভাগের ০৩ ভাগ।
শেখ জুমা বিন দালমুক আল-মাকতুম মালিতে আলোচ্য আমিরাতি স্বর্ণ বিষয়ক তৎপরতার একাংশের দায়িত্বে ছিলেন বলে অনুমান করা যায়। ফলে আলোচ্য সংগঠনটি তাকে নিজেদের লক্ষ্যবস্তু হিসাবে নির্ধারণ করে। প্রাথমিক পর্যায়ে JNIM এর পক্ষ হতে দুবাইকে শেখ জুমা ও তার সঙ্গীদের জীবনের বিনিময়ে নিম্নোক্ত শর্ত দেওয়া হয়েছিল।
০১|
মালির সরকার তাদের বিনিময়ে ২৫ জন JNIM অপারেটিভকে মুক্তি দিবে।
০২|
আরব আমিরাত সরকার JNIM এর নিকট ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মুক্তিপণ হিসাবে হস্তান্তর করবে।
০৩|
সশস্ত্র সংগঠনটির হাতে আরব আমিরাত সরকারকে রিপাবলিক অব শাঁদের পথ ধরে ২০ টন সামরিক সরঞ্জাম তুলে দিতে হবে।
তবে মালির পার্লামেন্ট মেম্বার ও তুঁয়ারেগ জাতির সদস্য আহমাদ আজি বিবি মধ্যস্থতা শুরু করার পর তারা পরবর্তীতে শুধুমাত্র ৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ও নিজেদের ২৫ জন সহযোদ্ধার মালির কারাগার হতে মুক্তির বিনিময়ে ০৩ জনকে ছেড়ে দিতে সম্মত হয়ে যায়। ইতিপূর্বে আলোচ্য আহমাদ আজি বিবি JNIM ও ফ্রেঞ্চ সরকারের মাঝে আলোচিত ফ্রেঞ্চ বন্দিনী সোঁফি পেত্রোঁনিনের মুক্তির বিষয়েও মধ্যস্থতা পরিচালনা করেছিলেন।
২০২০ সালে সোঁফি পেত্রোঁনিন মুক্তি পাওয়ার পর ফ্রান্সের মাটিতে ফিরে আসেন ও ইসলাম ধর্ম গ্রহণের ঘোষণা দেন! মিডিয়ার সামনে তখন তিনি নিজেকে পরিচয় করান মারইয়াম পেত্রোঁনিন হিসাবে। মালি থেকে উড্ডয়ন করে তাঁকে বহনকারী বিমান যখন প্যারিসের বিমানবন্দরে অবতরণ করে, কেবলমাত্র তখনই Emmanuel Macron ও ফ্রেঞ্চ সরকার উদ্ভূত নতুন পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হতে সমর্থ হয়েছিল। ফ্রান্সের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সেদিন ফ্রেঞ্চ রাষ্ট্রপতি অবস্থা দেখে জাতির সামনে তার যে ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল, তা বাতিল করে তড়িৎ গতিতে বিমানবন্দর থেকে সরে পড়েছিলেন।
বর্তমানে আরব আমিরাতের পরিশোধিত ৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আফ্রিকার আলোচ্য সংগঠনটির যুদ্ধ ও শাসন পরিচালনার সক্ষমতাকে আরো শক্তিশালী করে তুলবে বলে মনে করা যাচ্ছে। পাশাপাশি, অনেকে ধারণা করছেন যে, আরব আমিরাত এরকম অপমানিত হওয়াকে পছন্দ করবে না। ফলে, দুবাই থেকে আফ্রিকায় সংগঠনটির অগ্রযাত্রাকে থামাবার জন্য এখন সরাসরি আমিরাতের নানান মাধ্যমে জড়িয়ে পড়ার শক্তিশালী সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে।
ধন্যবাদ।