২০২২ সালের নভেম্বরে Haaretz সুদানকে জড়িয়ে একটি রিপোর্ট পাবলিশ করে। রিপোর্টটির বিবরণের শুরু হয় সুদানের রাজধানী খার্তুম হতে।
২০২২ সালের নভেম্বরে Haaretz সুদানকে জড়িয়ে একটি রিপোর্ট পাবলিশ করে। রিপোর্টটির বিবরণের শুরু হয় সুদানের রাজধানী খার্তুম হতে।
ওদের রিপোর্ট অনুসারে ১৮/০৫/২০২২ সাল তারিখ দুপুর ১০:২৬ ঘটিকায় مطار الخرطوم الدولي তথা খার্তুম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাইপ্রাসের লারনাকা থেকে উড়ে আসা একটি ফ্লাইট অবতরণ করে। বিমানটির প্যাসেঞ্জার ও কার্গো খার্তুমে অবতরণ করার তথ্যটি সম্পূর্ণ গোপন থাকার কথা ছিল। যা নিশ্চিত করার দায়িত্বে ছিল জেনারেল হামদান দাগালোর বাহিনীর নিজস্ব Intelligence Department হতে আগত অপারেটিভরা।
বিমানটি অবতরণের পর টারমাক স্পর্শ করার সাথে সাথে দু’টি টিন্টেড উইণ্ডো সজ্জিত জিপ বিমানের প্যাসেঞ্জারদের রিসিভ করে। জেনারেল হামদান দাগালোর Rapid Support Forces (RSF) এর Intelligence Department হতে আগত অপারেটিভরা তারপর তড়িৎ গতিতে বিমানে বহন করে আনা কার্গো আনলোড করে বিমানবন্দর ছেড়ে বেরিয়ে যায়। ওদিকে ওদের সাথে তাল মিলিয়ে অবতরণের মাত্র ৪৫ মিনিটের মাথায় খার্তুমের আকাশ ত্যাগ করে আলোচ্য প্রাইভেট বিমানটিও।
বিমানটি ছিল Intellexa Consortium এর। যার ফাউণ্ডারের নাম কর্নেল তাঁল দিঁলিয়ান। Israel Defense Forces এর Military Intelligence Directorate এর মাঝে Special Operations Division নামে একটি বিশেষায়িত শাখা রয়েছে। কর্নেল তাঁল দিঁলিয়ান ওখানকার চরম গোপনীয় Unit 81 এ কমাণ্ডিং অফিসার হিসাবে দায়িত্ব পালন করতো। তারপর ইসরায়েলি ইন্টেলিজেন্স কমিঊনিটির পক্ষ হতে আলোচ্য অফিসারকে পৃথিবীর নানান প্রান্তে ইসরায়েলি ইন্টেলিজেন্সের ডেভেলপ করা নজরদারি বিষয়ক টেকনোলজি ডেপ্লয় করার দায়িত্বে নিয়োজিত করা হয়। লোকটির পরিচালিত কোম্পানি হতে তারপর বাংলাদেশের National Telecommunication Monitoring Center (NTMC) ও Directorate General of Forces Intelligence (DGFI) বহু মূল্যবান নজরদারি বিষয়ক সরঞ্জাম কিনেছে।
কর্নেল তাঁলের কোম্পানি বাংলাদেশি ইন্টেলিজেন্স কমিঊনিটির হাতে যেসব টেকনোলজি দিয়েছিল, তার মাঝে অন্যতম ছিল Predator Spyware। আর আমাদের সুদান নিয়ে আজকের আলোচনার বিষয়বস্তুও এটি।
ইসরায়েলিরা আলোচ্য সার্ভেইল্যান্স টেকনোলজি সুদানের ক্ষমতার ভারসাম্য পরিবর্তন করে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে RSF এর Intelligence Department এর হাতে সরবরাহ করে। সিস্টেমটিকে কারো ওপর ডেপ্লয় করা গেলে এটি তার হাতে থাকা স্মার্টফোনের ক্যামেরা ও রেকর্ডিং অপশন ইঊজারের অজান্তে চালু করে দেয়। আসলে বলা উচিত, এটি পুরো ডিভাইসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেলে। ফলে কারো হাতে থাকা মুঠোফোন পরিণত হয় তার শত্রুপক্ষের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত লিসেনিং ডিভাইসে।
তবে সিস্টেমটি পরিচালনার জন্য একটি কেন্দ্রীয় Command & Control (C2) স্টেশন দরকার হয়। যার নিয়ন্ত্রণ নিজ হাতে না থাকলে কোনো কিছু করা সম্ভব নয়। সুতরাং, জেনারেল হামদান দাগালো তার গোয়েন্দা বাহিনীকে সেদিন সিস্টেমটির সমস্ত খণ্ড নিয়ে সোজা খার্তুম শহর থেকে বেরিয়ে পড়ার আদেশ জারি করে। কারণ, সুদানের সত্যিকার গোয়েন্দা সংস্থা Directorate of General Intelligence Service এর কানে ততক্ষণে তার অশুভ তৎপরতা ও কুকর্মের খবর চলে গিয়েছে। তারা RSF এর হাত থেকে সিস্টেমটি জব্দ করার লক্ষ্যে জোরদার তল্লাশি অভিযান চালাতে শুরু করে। ফলে জেনারেল দাগালোর গোয়েন্দারা ওটাকে নিয়ে রওয়ানা হয় ওদের মূল ঘাঁটি সুদূর দারফুর অঞ্চলের দিকে।
RSF Intelligence Department এর হাতে অমন মারাত্মক টেকনোলজি অবশ্য ইসরায়েল রাতারাতি তুলে দেয়নি। চরম নিচ, উচ্চাভিলাষী ও লোভী বলে পরিচিতি পাওয়া জেনারেল হামদান দাগালোকে তার আগে ইসরায়েলের কাছে নিজেকে নির্ভরযোগ্য হিসাবে প্রমাণ দিতে হয়েছে। যার অংশ হিসাবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পক্ষ হয়ে ইয়েমেনের মাটিতে সে তার বাহিনী হতে ৪০,০০০ সুদানি সৈনিক মোতায়েন করে। নর্দার্ন ইয়েমেনে তার Rapid Support Forces (RSF) এর সেনারা Al-Qaeda in the Arabian Peninsula (AQAP) ও সাউদার্ন রিজিয়নে হুথি বলে পরিচিতি পাওয়া Ansarallah যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অফেন্সিভ অপারেশনে অংশ নেয়। নিজেকে ও নিজের বাহিনীকে সেখানকার রণাঙ্গনে বিশ্বস্ত হিসাবে প্রমাণ করার পর ইসরায়েল তখন তাকে সুদানের মাটিতে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের পথে গুরুত্বপূর্ণ দাবার ঘু্ঁটি হিসাবে নির্বাচন করে।
সুতরাং, ২০২০ সালের শেষার্ধে তেল আবিব হতে The Institute for Intelligence & Special Operations তথা মোসাদের তৎকালীন ডিরেক্টর Rapid Support Forces (RSF) এর জেনারেল হামদান দাগালোর সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য আগমন করেন। গোপন একটি স্থানে সংঘটিত তাদের আলোচ্য সাক্ষাতের আয়োজক হিসাবে সেখানে সেদিন উপস্থিত ছিলেন আরব আমিরাতের National Security Adviser (NSA) তাহনুন বিন জায়েদ আল নাহিয়ান স্বয়ং। এখানে বলে রাখা ভালো যে, ২০২০ সালের শুরুতে কিন্তু সুদানের বর্তমান রাষ্ট্রপতি ও চলমান গৃহযুদ্ধের সরকারি পক্ষ জেনারেল আব্দেল ফাত্তাহ বুরহান Benjamin Netanyahu এর সাথে উগাণ্ডায় মিটিং করেছিলেন। তবে, হয়তোবা সেখান হতে আশানুরূপ ফল ইসরায়েল পায়নি। যদিও ওদের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে মিটিংটাকে সেবার ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথে প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
যাইহোক, Predator সেদিন রওয়ানা হয়ে গেলো দারফুরের দিকে। তার গন্তব্য তখন দারফুরের বুক চিরে সোজা আকাশের পানে উঠে যাওয়া সুদানের মাররাহ মাউন্টেন রেঞ্জ। ১০ হাজার ফিট উঁচু চূড়ার চতুর্দিকে মাঝারি টিলা, পর্বত, শৈলশিরা আর গভীর উপত্যকায় ঘেরা মাররাহ রেঞ্জ Rapid Support Forces এর শক্তিশালী আস্তানা বলে স্বীকৃত। যেখানে পৌঁছাতে পারলে ওদের ধরার মতো সুদানে কোনো শক্তি অবশিষ্ট থাকছে না।
সুতরাং, সুদানিজ ইন্টেলিজেন্সের নজরদারি এড়িয়ে সিস্টেম মাররাহ মাউন্টেন রেঞ্জের মাঝে প্রস্তুত করা দূর্গম স্টেশনে চলে এলো। আর তখন হতে সুদানের ধূসর মরুর আকাশে শুরু হয়ে গেলো দূর্যোগের চরম ঘনঘটার। তবে, সুদানে আসলে যে স্রেফ ইসরায়েল একলা কাজ করছে তাও নয়। রাশিয়ার PMC Wagner তথা রাশিয়াও দীর্ঘদিন যাবত সেখানে Rapid Support Forces কে স্বর্ণের বিনিময়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। তবে, তা আরেকদিনের জন্য তুলে রাখলাম।
ধন্যবাদ।