ও আস্তা একটা পাগল। ওর কথা কেউ শুনো না
হযরত নুহ আ.-এর স্ত্রী ওয়ালিহা স্বীয় স্বামী সম্পর্কে মানুষের কাছে বলত, “ও আস্তা একটা পাগল। ওর কথা কেউ শুনো না।”
হযরত লুত আ. -য়ের স্ত্রী ওয়ালিয়া ঘরেঘরে গিয়ে নিজ গৃহে ঘটা সব গোপন কথা ফাঁস করে দিত। লুত আ.-য়ের কাছে কোনো অতিথি আসলে সেই খবর খুব দ্রুত দুশ্চরিত্রবান মানুষদেরকে জানিয়ে দিত তাঁরই স্ত্রী।
উপর্যুক্ত দুজন মহিলাই ছিল নবীদের স্ত্রী। নিষ্পাপ মানুষদের সহধর্মিণী। এমন পবিত্র সোহবত পেয়েও তারা দ্বীনে আসেনি। নবীর ঘরে থেকেও নবুওয়তের বিরোধিতায় লিপ্ত ছিল। পরিণামে আল্লাহ তাদেরকে জাহান্নামের বাসিন্দা বানালেন।
অপরদিকে ভয়ঙ্কর জালিম বাদশাহ ফিরাউনের স্ত্রী ছিলেন আসিয়া আ.। ঘর করেছেন ‘ইলাহ’ দাবী করা আল্লাহদ্রোহীর সাথে। কুফরির ওপর প্রতিষ্ঠিত নরকতুল্য কুটিরে থাকতেন। তবুও আল্লাহকে ভুলেননি। আল্লাহতে বিশ্বাস ছিল শতভাগ। তিনি ছিলেন মুত্তাকীনা-মুসলিহাদের অন্তর্ভুক্ত।
স্বামীর অত্যচারে অতিষ্ঠ হয়ে দুয়া করেছিলেন, “হে আমার রব, জান্নাতে আমার জন্য একটা ঘরের ব্যবস্থা করে দিন। ফিরাউনের অধীনতা থেকে রেহাই দিন। মুক্তি দিন এই জালিম সম্প্রদায়ের বলয় থেকে।”
আল্লাহ কবুল করলেন। কাফিরের স্ত্রীকে জান্নাতের সুউচ্চ মাকামে স্থান করে দিলেন।
সুতরাং সামাজিক স্ট্যাটাস, শিক্ষাদীক্ষা, বংশপরিচয়, ব্যক্তি পরিচয় দিয়ে মানুষ মাপা যায় না। সোনার মানুষ হয় বিশ্বাসে। হুজুরের ঘরেও নাস্তিক জন্ম নিতে পারে, আবার নাস্তিকের ঘরে আল্লাহর প্রিয় বান্দা বেড়ে উঠতে পারেন। একেই বলে হেদায়াত–সত্য পথের সন্ধান। হেদায়াত হচ্ছে সবচেয়ে বড় নেয়ামত। জীবন ধারণের অক্সিজেন থেকেও মূল্যবান। হেদায়াত না থাকলে অক্সিজেন টেনে বেঁচে থাকার মূল্য কী?
আল্লাহ মানুষের বাহ্যিক দিক দেখেন না। দেখেন শুধু অন্তর। দেখেন আল্লাহভীতির পরিমাণ। আর কিচ্ছু নয়। আল্লাহর কাছে শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গ সবাই সমান। পার্থক্য নেই একটুও।
যে যত বেশি তাকওয়াবান সে আল্লাহর কাছে তত বেশি মূল্যবান। জন্ম বা বাস যেখানেই থাকুক তাতে কিচ্ছু যায় আসে না।
মনে রাখতে হবে, আমরা বাহ্যিক পোশাকাদি, গায়ের রঙ এবং প্রভাবপ্রতিপত্তি দেখে মূল্যায়ন করলেও আল্লাহ কিন্তু অন্তর দেখে গুণাগুণ বিচার করেন।